এভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে অপদস্থ করা যায়?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে প্রতিনিয়ত অপদস্ত করা হচ্ছে, হেনস্থা করা হচ্ছে। তার সুনামহানি করা হচ্ছে। তার সম্বন্ধে অশালীন, আপত্তিকর বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। আর এসব বক্তব্য অন্য কেও দিচ্ছে না, দিচ্ছেন তার ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জা। গত চারদিন ধরে একটি জনপ্রিয় দলের সাধারণ সম্পাদক সম্পর্কে যে ধরনের কথাবার্তা বলা হচ্ছে তা শুধু অরুচিকর নয়, অত্যন্ত নিম্নমানের আপত্তিকর। অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলো যে, এ সমস্ত কথাবার্তার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তো নয়ই, আওয়ামী লীগের কেউ কোনো কথাবার্তা বলছেন না। এ ধরনের কথাবার্তা বলার নীরবতা একটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেন যে, একজন সাধারণ সম্পাদককে যদি এ ধরনের কথাবার্তা বলে পার পাওয়া যায় তাহলে দলে কোনো চেইন অফ কমান্ড থাকবে না। আগামীতে যে কোনো নেতার সম্পর্কে যে কেউ অশ্লীল কটূক্তি করার ধৃষ্টতা পাবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেন দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘদিন এই দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আর সে কারণেই এই পদটির ব্যাপারে একটি আলাদা আবেগ অনুভূতি কাজ করে এবং সাধারণ সম্পাদক পদটি একটি বিশেষ মর্যাদার জায়গা দখল করে। তারপরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল এবং ওবায়দুল কাদের কেবল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকই নয়, তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও বটে। বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হরহামেশা বিভিন্ন লোকজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে ছোট ছোট খাটো অভিযোগে। অথচ কাদের মির্জা একের পর এক ফেসবুক লাইভে এসে যে সমস্ত কটূক্তি করছেন তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ প্রশ্ন করেছেন যে, তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সরকারি দলের জন্য এক রকম আর বিরোধী দলের জন্য একরকম। কাদের মির্জার এ ধরনের বক্তব্যের ফলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের জন্য শুধু না, পুুরো আওয়ামী লীগের জন্য একাধিক সমস্যা তৈরি হয়েছে।

১. সাধারণ সম্পাদকের মর্যাদা হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে: কাদের মির্জা কটূক্তির ফলে জাতীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে যে, তার নিজের ভাই যখন তার সম্পর্কে এ ধরনের কথাবার্তা বলেন তখন নিশ্চয়ই তার কোনো সমস্যা রয়েছে। আর এ কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

২. দলের ভেতর চেইন অব কমান্ড নষ্ট হচ্ছে: ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে কাদের মির্জা এ ধরনের বক্তব্য রেখে যখন বহাল তবিয়তে থাকছেন, প্রতিদিন যখন তিনি নিত্যনতুন অভিযোগ আনছেন, তখন দলের দুর্বলতাই প্রকাশ পায় এবং অন্যান্য নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, আওয়ামী লীগ আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। আত্মীয় হলে আওয়ামী লীগের সাত খুন মাফ। এর ফলে অন্যান্য নেতারাও উৎসাহিত হবেন এবং তারাও তাদের অপছন্দের নেতাদের সম্বন্ধে প্রকাশ্যে আপত্তিকর কথা বলতে পিছপা হবেন না।

৩. দলের ওপর সাধারণ সম্পাদকের নিয়ন্ত্রণ ক্ষুন্ন হচ্ছে: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তৃত্ব থাকার কথা। কিন্তু তিনি যখন নিজের ভাইকেই সামাল দিতে পারছেন না, তখন অন্য একজন ব্যক্তির অপকর্ম বা তার খারাপ জিনিস নিয়ে তিনি কথা বলতে ভয় পাবেন। কারণ তার মুখের ওপরে হয়তো কেউ বলে দেবে যে, নিজের ভাই আপনার বিরুদ্ধে এটা বলেছে তখন আপনি কি করেছেন। এটি দল পরিচালনায় দলের সাধারণ সাম্পাদকের একটি বড় দুর্বলতার জায়গা বলে মনে করা হচ্ছে।

৪. আওয়ামী লীগের নীরবতা: একজন কাদের মির্জা ওবায়দুল কাদেরের ভাই কিনা সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো তিনি আওয়ামী লীগের একজন তৃণমূলের কর্মী। তৃণমূলের একজন কর্মী যখন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তির সম্বন্ধে এ ধরনের আপত্তিকর কথা বলে পার পেয়ে যান এবং আওয়ামী লীগের অন্য কোনো নেতারা এ নিয়ে কথা বলেন না তখন দলের অন্তঃকলহ এবং দেউলিয়াত্ব প্রকাশ হয়ে যায়। যে দলটি ১২ বছর ক্ষমতা আছে, সেই দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিকে তুলোধুনা করেও পার পাওয়া যায় এই সংস্কৃতি আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। আর এ কারণেই মনে করা হচ্ছে যে, অবিলম্বে কাদের মির্জার বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না হয় তাহলে আওয়ামী লীগের মধ্যে নতুন সংকট দেখা দেবে।